সিলেট নগরের বিআইডিসি এলাকায় মা-মেয়েকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর সৎ ছেলেকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ঘাতক ছেলে কিশোর আবাদ হোসেনকে (১৭) আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) রাত ১২টার দিকে শাহপরান থানাধীন বিআইডিসি এলাকার পীর মহল্লার একটি বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সৎ মা ও ভাইবোনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেও জানা যায় পুলিশ।
নিহত গৃহবধু রুবিয়া বেগম (৩০) ও তার মেয়ের নাম মাহা বেগম (৯) নগরীর ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এসময় গুরুতর আহত অবস্থায় রুবিয়া বেগমরে ছেলে তাহসিন (৭) কে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাহসিন।
সিলেটের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সিলেটের বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা আবদাল হোসেনের (৪২) শাহপরান এলাকায় মুদি দোকান রয়েছে। ব্যবসার স্বার্থে তিনি বিআইডিসি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। আবদাল হোসেন দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী তার দুই ছেলে মেয়েসহ বিয়ানীবাজারে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আর ২য় স্ত্রী ও তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিআইডিসি এলাকার বাসায় থাকেন আবদাল। মাস ছয়েক পূর্বে নিজের প্রথম স্ত্রীর পক্ষের বড় ছেলে আবাদ হোসেনকে শহরের বাসায় নিয়ে আসেন আবদাল। আবাদ সৎ মায়ের সাথে থাকার পাশপাশি বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন।
তিনি আরো জানান, বিয়ানীবাজার থেকে বিআইডিসির বাসায় আসার পর থেকে সৎ মায়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া বেধে যেতো তার। আবাদ পুলিশকে জানিয়েছে, সৎ মা তাকে নির্যাতন করতেন। এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন। এই ক্ষোভ থেকে সে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করেছে। তবে আবাদের বক্তব্য যাছাই বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সৎ মা, বোন ও ভাইকে কুপিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় আবাদ। শয়নকক্ষের খাটের তোশকে আগুন ধরিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় সে। লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবাদ এমনটি করতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।
পরে আগুন দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আবাদকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বিছানা থেকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এসব ঘরের অনেক আসবাব পুড়ে গিয়েছিলো। পুলিশ আবাদকে ধরে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে আবদাল হোসেনের অবস্থা পাগলপ্রায়। তিনি কেবল বিলাপ করে চলছেন। নিজের ছেলের এমন কান্ডে বিস্মিত আবদাল কেবল বলে চলছেন- ‘তারচেয়ে আমাকেই মেরে ফেললো না কেনো’।
ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, মরদেহগুলো এখনও হাসপাতালে আছে। শনিবার ময়না তদন্ত হবে। এরপর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘটনায় এখনো মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুনঃ প্রতারণা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন